পবিত্র বেদ তথা বৈদিক শাস্ত্র উপবাস সম্পর্কে কি বলে আসুন জেনে নেই-
“বয়ং সোম ব্রতে মনস্তনূষু বিভ্রতঃ। প্রজাবন্তঃ সচেমহি।।”
(ঋগ্বেদ, ১০/৫৭/৬)
অনুবাদঃ- হে প্রেমময় পরমাত্মান্! শরীরে মানসিক শক্তিকে ধারণ করিয়া আমার সন্তাদের সহিত তোমার ব্রতে তোমাকেই সেবা করিতেছি।
“ব্রতেন দীক্ষামাপ্নোতি দীক্ষামাপ্নোতি দক্ষিণাম । দক্ষিণা শ্রদ্ধামাপ্নোতি শ্রদ্ধয়া সত্যমাপাতে ।।”
(যজুঃ ১৯/৩০)
“হে মনুষ্যগণ ! তোমরা মনুষ্য জন্মের উদ্দ্যেশ্য জানিয়া ব্রত ধারণ করিয়া সংসারে কর্ম্ম কর ; (মনুষ্য জীবনে পূর্ণ সফলতা ও শ্রেষ্ঠ উৎকর্ষ লাভের জন্য কর্ত্তব্য পালন করিবার সঙ্কল্পকে ব্রত কহে)।
ব্রত ধারণ করিয়া কর্ম্ম করিলে, পৃথিবীর ঐশ্বর্য্য দক্ষিণাস্বরূপ তোমাদের দান করিয়া রাখিয়াছি গ্রহণকরতঃ তাহার। সদোপযোগ করিয়া সুখী হও। ঐশ্বর্য্যে মোহপ্রাপ্ত না হইলে আমার উপর শ্রদ্ধা বাড়িতে থাকিবে, আমার উপর শ্রদ্ধা বাড়িলে আমাকে সত্যস্বরূপ ও আনন্দস্বরূপ জানিয়া ও প্রাপ্ত হইয়া মুক্তির আনন্দ ভোগ করিতে পারিবে।উপবাস /ব্রত
বৈদিক মিশন
মনুষ্য বলিতে গেলে জীব জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জীব, জ্ঞান গ্রহণের উপযোগী, কর্ম্ম করিতে স্বাধীন, চৈতন্য স্বরূপ জীবাত্মাকেই বুঝায়। জীবাত্মা, শরীর ইন্দ্রিয় এবং বুদ্ধি অহংকাররূপ করণ আদির সাহয্যে জ্ঞান, কর্ম্ম, উপাসনা রূপ সমস্ত প্রয়োজন সাধিত করিয়া থাকে, ইহারা মনুষ্যের ভৃত্য স্বরূপ। স্থূল শরীর, ইন্দ্রিয় করণ আদি সমস্তই জড় প্রকৃতি হইতে উৎপন্ন বলিয়া ইহাদের ভোগের কোন প্রয়োজন থাকিতে পারে না। মনুষ্যের ব্রত বলিতে গেলে, আত্মার শ্রেষ্ঠ উৎকর্ষের উপযোগী কর্ত্তব্য কর্ম্ম করিবার সঙ্কল্প বুঝায়। মনুষ্য মাত্রেই দুঃখের নিবৃত্তি চায় ; সুখের আকাঙ্ক্ষাযুক্ত মানুষের মধ্যে কোথা হইতে দুঃখ আসিল জানিতে না পারিলে তাহার নিবৃত্তির উপায় কি করিয়া স্থির হইতে পারে।
শ্রীমদ্ভগবদ গীতা (ধ্যানযোগ : ১৬-১৭)
অতিভোজী, নিতান্ত অনাহারী, অতি ঘুম বিলাসী, একেবারে কম ঘুমায় তারা কখনো ধ্যানে সফল হয় না। যিনি নিয়মানুযায়ী আহার করেন, কাজ করেন, বিশ্রাম নেন, যার নিদ্রা ও জাগরণ নিয়মের ছন্দে ছন্দায়িত তিনি ধ্যানে সফল হন।তার দুঃখের বিনাশ ঘটে। বিচরণ করেন আত্মার আনন্দলোকে।
শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় (ধ্যানযোগ : ১৬-১৭) বলেছে কর্মের জন্য (ব্রত/উপবাস) করতে হয় কেন তা বিশ্লেষণ করে দিচ্ছি—
ভোগাসক্ত, আসুরী-সম্পদসম্পন্ন, সেইসব মানুষের মনোভাব কীরূপ, ভোগে আসক্ত এরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে, অহংকার এবং অর্থগর্বে গর্বিত হয়ে থাকে।
হ্যাঁ, এরা যজ্ঞাদি শুভকর্ম যা কিছু করে তা সবই দম্ভ ও লোকদেখানোর জন্য এবং অবিধিপূর্বক করে থাকে।
তারা কেন এমন করে?— (কেননা তারা অহংকার, দম্ভ, অভিমান, কাম ও ক্রোধের আশ্রয় নিয়ে থাকে)। ভগবান, তাদের আর কী ভাব হয়?— (এইসব ব্যক্তি তাদের ও অপরের দেহস্থিত অন্তর্যামীরূপ আমাকে দ্বেষ করে থাকে এবং আমার ও অপরের গুণাদিতে দোষদৃষ্টি রাখে)।।
উপবাস বলতে কী বোঝায় তা খুব সংক্ষেপে কিছু বলা যাক— (উপবাস মানে ঈশ্বরের নিকটে বাস)।
ব্রত (উপবাস) করবেন আপনি যজ্ঞ, তপস্যা ও দানেরও তিনপ্রকার পার্থক্যের কথা শুনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন